শহুরে জীবনকে উদযাপন করতে চায় মেঘদল। কবির সুমন বা মহীনের ঘোড়াগুলির নগর কলকাতার বিপরীতে ঢাকাই বিকল্প বাস্তবতা নির্মানের চেষ্টা সবসময় ঢাকাকে পিছিয়ে রাখে। আমাদের একমাত্র মহানগরের এমন পরাজয় মেনে নিয়েই মেট্রোপলিটান জীবনের পরাবাস্তব জগৎ উন্মোচন করে মেঘদল।
আমার শহর–আবার শহর–এসো আমার শহরে মেঘদলের শহরকেন্দ্রিকতার প্রধান স্বারক। প্রথম দুটো গানের আমেজ-ফুর্তি-বিপ্লব এবং শহরের প্রতি রোমান্টিক প্রার্থনাগুলো সাম্প্রতিক গানে এসে চুর চুর হয়ে ভেঙে পড়ে।— বুঝি রূপান্তর ঘটে যায় সুমন থেকে শিবুতে বা দেড় যুগের তফাত প্রকাশ পায়।
লজ্জ্বা কিংবা ব্যর্থতায় আমাদের শহরের কিছু গল্পকে আমরা অস্বীকার করি— তার মাঝেই নিমন্ত্রণ জানাই— এসো আমার শহরে। নামহীন গল্প এই শহরের আপন প্রাচীন গল্প— এই শহরের অধিবাসীরা নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। অথচ কোথা থেকে আসে এক রাজহাঁস ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে পার হয় জেব্রা ক্রসিং। আসে আলোর পথিক তার পোষা পাখিদের নিয়ে এবং খুনি— উন্মাতাল শহুরে আবহে যে খুন করে পাসপোর্টহীন রাজহাঁসটিকে। আসে এক নারী, রেসের ঘোড়া হতে— আমরা তাকে ভুলিয়ে দেই পিতৃপরিচয়। মায়াবী মহিষ আসে যেনবা তার গন্তব্য খুঁজে নিতে কসাই খানায়। ব্রয়লারেরা বরণ করে নেয় তাদের ভাগ্য।

অনেকে বলেন, প্রাণীরা অনেক কিছু বুঝতে পারে। সাপ-পেঁচা-হরিণ কি এই রহস্যময় গল্পগুলো জেনে নিতে চায়? না তাদের কিছু বলবার আছে? আমরা বুঝি না। মাছের ওড়াউড়ি Up&Up-এর কথা মনে করিয়ে দেয় হয়তোবা।
গানের অনুসঙ্গ ফুটেজ আলাদাভাবে পাঠ করবার দাবি জানায়। ধরা যাক— সে পৃথক এক সিনামা। শহুরে পরাবাস্তবতা ছাপিয়ে শক্তিশালী ম্যাজিক রিয়েলিজম আমাদের সামনে ধরা দেয়।
গ্রাম থেকে এক ছোটগাছ নিয়ে মহানগরে আসে এক বৃদ্ধ বনসাই। এক বস্তার ভেতর তার যাবতীয় সম্বল। আবার ব্রিফকেস হাতে ময়লার প্রান্তর পাড়ি দিয়ে কেউ শহরমুখী হন জীবিকার খোঁজে। না-বলা-গল্পের এক শহরে আরও অনেক না-বলা-গল্পেরা এসে জড়ো হয়। তবে এর কিছু জবাব বোধহয় আগেই দিয়ে দিয়েছে মেঘদল।
কিছু সবুজ পাতার ক্রন্দন তুলে রেখো
ভেজা ভেজা চোখে কান্না লুকাতে পারো
ভুলে যেতে পারো চাইলেই বারবার—